রবিবার, ২৯ Jun ২০২৫, ১২:৪৪ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

হামাসের যুদ্ধকৌশল, কিসিঞ্জার এবং মার্কিন ভেটো

সাইফ তারিক:
ভেটোর মর্মার্থ হচ্ছে, ‘আমার মনপসন্দ হলো না তাই আটকে দিলাম।’ যে কেউ তার স্বার্থে আঘাত লাগলে না-পসন্দ করতে পারে, ভেটো দিতে পারে। তবে শর্ত হচ্ছে, অপছন্দ হওয়ার বিষয়টিকে যুক্তিযুক্ত তথা র‌্যাশনাল হতে হবে। মানুষ র‌্যাশনাল প্রাণী। দুই কারণে ভেটো দেওয়া যেতে পারে। এক. একান্ত নিজস্ব স্বার্থে, দুই. পড়শির স্বার্থে, অর্থাৎ ওপাড়ায় গোলযোগ সৃষ্টি করা যাবে না তাহলে আমার ঘরেও আগুন লাগতে পারে। দুটি শর্তকেই যৌক্তিক হতে হবে। ভেটোও তখন যৌক্তিক হবে।

গাজায় যে সংঘাত-সংঘর্ষ চলছে, তার সূচনা হয়েছিল অক্টোবরের ৭ তারিখে ইসরায়েলি বাহিনী ও স্থাপনায় হামাসের রকেট হামলার পরিপ্রেক্ষিতে। সে সংঘাত-সংঘর্ষ বন্ধ হওয়া উচিত এরকম একটি প্রস্তাব করেছিল জাতিসংঘ। প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো স্বার্থ যৌক্তিকভাবে এ ভেটোর সঙ্গে জড়িত আছে মনে করার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। ভেটো দেওয়ার এক নম্বর শর্তটি এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাহলে পড়শির স্বার্থে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। গ্রামটির নাম যদি ‘বিশ্ব’ হয়ে থাকে তাহলে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন দুই সত্তাই বিশ্বের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পড়শি। তাহলে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের (যার একাংশের প্রতিনিধি হামাস) মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে উভয় পক্ষকেই কেন পড়শি ভাবা যাচ্ছে না? যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিলে কি দুই পক্ষকেই সংঘাত-সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়? তাহলে মার্কিন ভেটো কোন পক্ষে গেল! শর্ত এক ও শর্ত দুই যদি ঠিকমতো কাজ না করে তাহলে এ ভেটোকে যৌক্তিক বা র‌্যাশনাল বলা যায় না। যে সত্তা যৌক্তিকতা বা র‌্যাশনালিটি দেখাতে পারে না তাকে ভদ্র রাষ্ট্রসমাজে গ্রহণ করা চলে না, যুক্তরাষ্ট্রকেও নয়। যুক্তরাষ্ট্র একটা অযৌক্তিক রাষ্ট্রসত্তা। ইসরায়েলি বাহিনীর অনুকূলে সে তার ভেটোক্ষমতা প্রয়োগ করেছে। কেন? কী স্বার্থ বিবেচনা করে ভেটো দেওয়া হলো! ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি চেয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব গত শুক্রবার আটকে দেওয়ার পরই সারা বিশ্বে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ের কপ সম্মেলনেও প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়ে। সেখানে জলবায়ু বিষয়ক সুবিচারের দাবির পাশাপাশি গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিও ওঠে। আরব বিশ্বেও যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ভেস্তে গেলে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাতায়েহ বলেন, ‘এ প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে ইসরায়েলকে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর, গাজার মানুষের বাস্তুচ্যুতির অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র।’ জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের দূত রিয়াদ মনসুর বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণকে সমর্থন করলে এ যুদ্ধের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই হবে।

বিশ্বের মানুষ এ যুদ্ধের প্রতিবাদ করছে, বিক্ষোভ করছে। আর ইসরায়েল বাড়িঘর, হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থীশিবির পুরো গাজায় নির্বিচার বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি আগ্রাসনে ইতিমধ্যে ১৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের ৭০ শতাংশই শিশু ও নারী। যুদ্ধবিরতির দাবিতে লেবাননের বৈরুত, জর্দানের আম্মানসহ বিভিন্ন জায়গায় মানুষ বিক্ষোভ করেছে। তাদের বিক্ষোভই সার। গণতন্ত্রের দেবদূত যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম এশিয়ার একমাত্র ‘গণতন্ত্র’ ইসরায়েলের সঙ্গে কোলাকুলি করছে আর ‘দস্যুতন্ত্র’কে, ‘অসুরতন্ত্র’কে হটানোর চেষ্টা করছে। এ জন্যই ভেটো। তাকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েল অর্থাৎ এক ‘গণতন্ত্র’ স্বাগত জানিয়েছে আরেক ‘গণতন্ত্র’কে। আর কবরে পাশ ফিরে শুলেন জর্জ ওয়াশিংটন যুক্তরাষ্ট্রের পিতা।

এমনটা ঘটার কারণ কী? এর একটা ব্যাখ্যা প্রয়োজন। ফিলিস্তিন, হামাস, আরব বিশ্ব ও ইসলাম; ইসরায়েল ও ইহুদি মতবাদ এবং যুক্তরাষ্ট্র তথা পাশ্চাত্য ও খ্রিস্টীয় মতবাদ সবগুলো বিষয় ও সত্তার একটা চওড়া ব্যাখ্যা দরকার। সত্তাগুলোর আন্তঃসম্পর্ক বোঝার জন্য দরকার, যুদ্ধবিরতিতে ভেটো দেওয়ার অন্তর্নিহিত কারণ অনুধাবনের জন্য দরকার। এর পেছনে কোনো মতাদর্শিক, মনস্তাত্ত্বিক কারণ আছে কি না সেটা বোঝার জন্যও দরকার। তার জন্যই একটা দীর্ঘ উদ্ধৃতির সাহায্য নিচ্ছি : …

… How Islam is different from Christianity or Judaism and how Islamic history, for better or worse, developed in conflict with Christian history.

… How Muhammad may serve as a great inspiration for White National Liberationists in the struggles to come?

… Muhammad was a non-Jew who founded a great religion inspired by religions founded by Jews: Judaism and Christianity. … Even though Christianity won over non-Jews, most significantly the Europeans who made it into the most powerful faith on Earth, it was totally founded by Jews. So, all Christians are really worshiping a religion envisioned and enacted by the Jewish spirit and imagination. Therefore, Christians are merely spiritual servants of Jews.

Christianity,… totally relied on the vision, imagination, and oratory of Jews. … non-Jews simply haven’t the reach and the depth to be prophets, to be touched by the divine light, and to be inspired by spiritual destiny. … They (non-Jews or Chrischians or Gentiles) shall be servants of the creative, prophetic, and visionary will of another people, one with prophetic prowess and visionary power.

Jesus, the Disciples, and Paul may have found a way to make the fire burn brighter, but it was from the original Jewish formula. So, when we look at the entirety of European Christendom, it is a story of a people who could not make a fire of their own and came to live off the fire of another people all these years. …It was never their fire. They didn’t make it. …From the Jewish Perspective, Christianity could only be a perversion of the True Faith.

In contrast, Muhammad did something truly remarkable. The key factor was that Muhammad was not Jewish (or even a Christian). He was a pagan Arab who, rather than striving to be accepted into the Jewish community or converting to Christianity, had the strength of will, both daring and reckless, to found a new religion. Unlike all those Europeans who knelt at the feet of Jewish prophets, Muhammad chose to be a prophet on his own terms. He learned about the great faiths of Jews and Christians, sought the divine light, communed with God/Allah, and received & presented the True (and Final) Version of the Way of God.

The West failed to produce a man of such will. … the Semito-Arab Muhammad digested Judaism and Christianity to the point where they could serve as nutrients for something new and different. …It was more than an interpretation of those established religions.

…Muhammad was an Arab (a non-Jew) who DARED to take on the role of a prophet. No white man in history ever dared to look so deep and far, …European Christians, incapable of being prophets themselves, merely accepted and served the prophetic will and reach of the Jews. This has to change if the white race is to survive in times ahead.

(Could Muhammad be a Greater Inspiration Than Jesus Christ for White People in the Future?/ JUNG-FREUD • OCTOBER 16, 2023/ www.unz.com)

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কড়া নিন্দা জানিয়েছে হামাস। হামাসের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেছেন, ওয়াশিংটনের পদক্ষেপ ‘অনৈতিক ও অমানবিক’। হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য ইজ্জাত এল-রেশিক বলেছেন, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালানোর এবং ফিলিস্তিনিদের জাতিগতভাবে নির্মূল করার পরিকল্পনায় নাম লেখাল।

যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি নিরাপত্তা পরিষদ। প্রস্তাব ভেস্তে দেওয়ার পর মার্কিন দূত রবার্ট উড বলেন, তাদের আপত্তির কারণ প্রস্তাবে উপযুক্ত পরামর্শের অভাব। হামাসের আকস্মিক হামলার কথাই খসড়ায় নেই। যুক্তরাষ্ট্র এবং সম্মিলিত পাশ্চাত্যের অন্য যারা প্রস্তাবের বিষয়ে অনুচ্চকিত ছিল মনে করা স্বাভাবিক যে, তারা ‘মিয়ারলি স্পিরিচুয়াল সারভেন্টস অব জু’স। যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ সে কথারই স্বাক্ষর দেয়। ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনতে গেলেই যুক্তরাষ্ট্র ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়। তবে সব খ্রিস্টধর্মাবলম্বীকে ইহুদিদের (বলা ভালো জায়নবাদীদের) আধ্যাত্মিক সেবাদাস (স্পিরিচুয়াল সারভেন্ট) বলা ঠিক নয়, উচিতও নয়; জায়নবাদীদের সমালোচনা করা গেলেও ইহুদিদের গড়-সমালোচনা করা যায় না। ইসলামেও তা নিষিদ্ধ। কারণ ইহুদিদের সব নবী ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদেরও নবী।

একজন আধুনিক জায়নবাদী, সারাবিশ্বে যার পরিচিতি এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও গণহত্যার তাত্ত্বিক হিসেবে, হেনরি কিসিঞ্জার। আরবাঞ্চলে তাকে নিয়ে কৌতুক চালু আছে। ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলার কারণেই নাকি বয়সের শতক পেরিয়েই তিনি অক্কা পেলেন, নাহলে আরও গোটা কতক গণহত্যার ছক্কা তিনি পেটাতে পারতেন। বাংলাদেশ তো বটেই, ভিয়েতনামেও তিনি গণহত্যার রূপকার ছিলেন। তবে ভিয়েতনাম যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে তার একটি মন্তব্য খুব গুরুত্বপূর্ণ গেরিলাযুদ্ধে গেরিলারা জিতে যায় যখন তারা হেরে না যায়, আর সেনাবাহিনী হেরে যায় যখন তারা জিততে না পারে। হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনী জিততে পারেনি; ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েও তারা হামাসকে নির্মূল করতে পারেনি। কিসিঞ্জারের কথা অনুযায়ীই হামাস জয়ী হয়েছে। হামাসের যে জয় হচ্ছে সে কথা সাবেক মার্কিন মেরিন সেনা ও জাতিসংঘের সাবেক অস্ত্রপরিদর্শক স্কট রিটারও বলেছেন। আর ভøাদিমির পুতিন তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন, এটা হামাসের কূটনৈতিক বিজয়।

লেখক: সাংবাদিক

tarik69@gmail.com

ভয়েস/আআ/সূত্র: দেশ রূপান্তর

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION